নম্বর না বদলিয়ে অপারেটর পরিবর্তন করবেন যেভাবে

নম্বর না বদলিয়ে অপারেটর পরিবর্তন সেবা বা এমএনপি চালু হলে একজন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী তার নম্বরের পূর্ণ মালিকানা পাবেন। এখন পর্যন্ত একটি নম্বরের মালিকানা সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটর ও যিনি নম্বরটি ব্যবহার করছেন তার। এমএনপি সেবা চালু হলে এমন অনেক সুবিধাই পাবে গ্রাহক।

প্রসঙ্গত, এমএনপি (মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি) সেবায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা নিজের পছন্দ মতো অপারেটর পাল্টে ফেলতে পারবেন। গ্রাহকের কাছে যে অপারেটরের সেবা, নেটওয়ার্কের মান, ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সেবার মান পছন্দ হবে তিনি চাইলে বিনা দ্বিধায় সেই সংযোগ নিতে পারবেন। এজন্য নিজের মোবাইল ফোন নম্বর বদলাতে হবে না।

আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই সেবা চালুর নির্দেশ রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে ওই দিন বা পরবর্তী কোনও দিন এই সেবা চালু হবে তা জানাতে পারেনি সেবাদানের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সেবা চালুতে তাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে। গত মে মাসের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তুতির কাজ শেষ করে রেখেছে। নির্ধারিত সময়েই তারা এই সেবা চালু করতে পারবে।

জানা গেছে, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এরই মধ্যে ৯০ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। কিছু কারিগরি জটিলতার সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। এরমধ্যে রয়েছে অভিন্ন কলরেট চূড়ান্ত না হওয়া (অফনেট ও অননেটের পরিবর্তে), আইসিএক্স (ইন্টারকানেশন এক্সচেঞ্জ) ও আইজিডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) সংক্রান্ত জটিলতা দূর না হওয়া ইত্যাদি।

জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটি একটি জটিল বিষয়। আমাদের জন্য নতুন বিষয়ও বটে। কারিগরি মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফলে সময় লাগছে। এছাড়া আমাদের বেঁধে দেওয়া সময় (৩১ জুলাই) তো আছেই। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অভিন্ন কলরেট এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি আছে। চূড়ান্ত হলেই আমরা সবাইকে জানিয়ে দিতে পারবো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে এমএনপির জন্য গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের আন্তঃসংযোগ স্থাপন (ভিপিএন কানেক্টিভিটি) সম্পন্ন হয়েছে। টেলিটক বাদে অন্য অপারেটরগুলোর ‘কোয়েরি’ আদান প্রদান ও সিস্টেম সমন্বিতকরণ (ইন্টিগ্রেশন) প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।

জানা যায়, এই প্রক্রিয়ায় (এমএনপিতে) মোবাইলে বিদেশ থেকে আসা (আইজিডব্লিউ) কলের মান কিছুটা খারাপ হতে পারে। আইজিডব্লিউ ও আইসিএক্স যদি তাদের সেটআপের কারিগরি উন্নয়ন করে তাহলে এই সমস্যা থাকবে না।

জানতে চাইলে এমএনপি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক বিডির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, আমরা এমএনপি সেবা দিতে শতভাগ প্রস্তুত। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি যেদিন বলবে (নির্ধারিত দিন) সেদিনই এই সেবা চালু করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, এই সেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারী মোবাইল নম্বরের পূর্ণ মালিকানা পাবেন। এর মাধ্যমে গ্রাহককে টেলিকম খাতে ক্ষমতায়িত করা সম্ভব হবে। ‘ফ্রিডম অব নেটওয়ার্ক’-এর কারণে গ্রাহক সংযোগ ব্যবহারে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করবেন। কোনও অপারেটরের সংযোগ (সেবার মান) ভালো না লাগলে অপাররেটর বদলে ফেলতে পারবেন।

মোহাম্মদ জুলফিকার জানালেন, একজন গ্রাহক যদি এমএনপি সেবা নিতে চান তাহলে তাকে প্রথমে যেতে হবে যে অপারেটরের সিম ব্যবহার করতে চান সেই অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে। ধরা যাক, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী গ্রামীণের সিম ব্যবহার করেন। তিনি অপারেটর বদলে যদি বাংলালিংক নিতে চান, তাহলে তাকে বাংলালিংকের কাস্টমার কেয়ারে যেতে হবে।

কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে নতুন সিম তুলতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ৫ মিনিট। এরইমধ্যে কাস্টমার কেয়ার কর্মীরা গ্রাহককে জানাবেন তিনি নতুন সিম পাবেন কিনা। কারণ হিসেবে জানানো হয়, প্রথমেই গ্রাহকের বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ (আঙুলের ছাপ) মিলিয়ে দেখা হবে। সেখানে কোনও গরমিল থাকলে গ্রাহককে জানানো হবে। এছাড়া যদি কোনও পোস্টপেইড গ্রাহকের বিল বকেয়া থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট অপারেটর সবুজ সংকেত পাঠাবে না কাস্টমার কেয়ারে। ফলে কোনও বিল বকেয়া থাকলে তা আগে পরিশোধ করে যেতে হবে। পোস্টপেইডেই যদি আগের কোনও ডিপোজিট থাকে তাহলে গ্রাহক ওই ডিপোজিট ফেরত পাবেন। তবে প্রি-পেইড গ্রাহকের সিমে যদি কোনও ব্যালেন্স (টাকা) থাকে বা ইন্টারনেট প্যাকেজ থাকে তাহলে সেই টাকা বা ইন্টারনেটের কী হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। ইনফোজিলিয়নের প্রধান নির্বাহী বললেন, এ কারণে গ্রাহক চাইলে পুরো ব্যালেন্স শেষ করে নতুন সিম নিতে পারেন।

তিনি আরও জানান, এই সেবা নিতে হলে গ্রাহককে ৩০ টাকা ফি দিয়ে (প্রতিবার) আবেদন করতে হবে। গ্রাহককে নতুন একটি সিম দেওয়া হবে। গ্রাহক সঙ্গে সঙ্গেই ওই সিম ব্যবহার করতে পারবেন না। সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নতুন সিম চালু হয়ে যাবে আর আগের সিমটি বন্ধ হয়ে যাবে। গ্রাহক যখন দেখবেন তার মোবাইলে ‘নো সার্ভিস’ দেখাচ্ছে তখন তিনি মোবাইল সেট থেকে পুরনো সিম খুলে নতুন সিম সেট করবেন। নতুন সিম মোবাইলে সক্রিয় হলে নতুন যে সিম (ভিন্ন অপারেটরের) নেওয়া হয়েছে সেই অপারেটরের নাম প্রদর্শন করবে। এমএনপি সেবা চালু করলে তিন মাসের (৯০ দিন) আগে অন্য কোনও অপারেটরে বা আগের (পুরনো) অপারেটরে ফেরত যাওয়া যাবে না। ৯০ দিন পরে গ্রাহক অন্য অপারেটরে যেতে চাইলে সে অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নতুন সিম নিতে পারবেন। নতুন সিম নেওয়ার পর গ্রাহককে ব্যালেন্স রিচার্জ নতুন সিমেই করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ মের মধ্যে এই সেবা চালুর কথা ছিল। কিছু কারিগরি সমস্যা থাকায় তা চালু করা যায়নি। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এমএনপি সেবা চালুর তাগিদ দিয়েছেন